জামাল উদ্দিন আফগানি
জামাল
উদ্দিন আফগানী
সাইয়েদ
জামাল উদ্দিন আফগানী ছিলেন উনিশ শতকের একজন বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব ।মুসলিম
দর্শনে পন্ডিত সংস্কৃতিবান ও চিন্তাবিদ মহান এই ব্যক্তিত্ব মুসলিম পুনর্জীবনের
জন্য তার জীবন ও প্রতিভা উৎসর্গ
করেছেন।স্বাধীনতার জন্য উপনিবেশ শক্তির বিরুদ্বে আন্দোলনে তিনিই প্রথম
মুসলিম যিনি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক
দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন।তিনি তার অনুসারীদের দ্বারা প্রসংশিত এবং তার বিরুধীদের
দ্বারা বৃটিশ তথা উপনিবেশের চর হিসাবে আখ্যা দেয় তার আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে
সালাফিয়্যা এবং পরবর্তীতে ভ্রাতৃত্ব আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।নিম্নে তার সম্পর্কে
আলোক পাত করা হল।
জন্ম ও
প্রাথমিক জীবনঃ
জামাল
উদ্দিন আফগানি ১৮৩৮ সালে আফিগানিস্থানের কাবুলের নিকট বর্তী আসাদাবাদ গ্রামে জন্ম
গ্রহন করেন।অন্য একটি সুত্রমতে ‘Nikki kiddy’ দাবি করেন যে তিনি ইরানের হামাদানের নিকট আসাদাবাদে
জন্ম গ্রহন করেন।
পিতার নিকট থেকে প্রথমিক
শিক্ষা গ্রহণের পর তিনি প্রথমে গাজবীন পরে তেহরান এবং ইরানের বিভিন্ন শহরে গমন
করেন।বাস্তবে তিনি তার শৈশবের অধিকাংশ কাবুলে কাটান তিনি কাবুলে প্রচলিত শিক্ষায়
অধ্যয়ন করেন।অতঃপর তিনি ভারতে একবছরের অধিক সময় পার করেন উচ্চশিক্ষার জন্য ।এরপর
মক্কায় হজ্জ পালন করেন এবং আফগানিস্থানে ফিরে আসেন।এবং একসময় স্থানীয় রাজনীতেত
জড়িয়ে পড়েন।আমীর মুহাম্মাদ দোস্ত এর অধীনে চাকরীতে যোগ দান করেন।হিরাত অভিযনে তার
সঙী ছিলেন।আমীরের মৃত্যুর পর তার পুত্রদের মধ্যে গৃহ যুদ্ব শুরু হলে, তিনি
মুহাম্মদ আজমের পক্ষালম্বন করেন।তিনি এসময় মন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে শের আলী জয়লাভ
করলে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। নিম্নে তার কর্মজীবনের ঘটনা তুলে ধরা হল।
রাজনৈতিক কার্যক্রমঃ
আফগানীকে মনে করা হয় উপনিবেশ
বিরোধী প্রথম নেতা ।কিন্তু যতদুর জানা যায় সে অনেক পরে রাজনীতিতে আসেন।তিনি
আফগানিস্থান থেকে বিতারিত হয়ে পুনরায় হজ্জ পালন করেন।এবং সেখান থেকে কায়রো গমন
করেন।
সেখানে তিনি আজহারের আলেম
দের সাথে পরিচিত লাভ করেন।এবং সেখানে কিছুকাল থাকার পর ইস্তাম্বুলে আসেন।সেখানে তার ব্যাপক পরিচিত লাভ
করেন।তার সাফাল্যে ইর্ষান্বিত হয়ে কতিপয় লোক তার বিরুদ্বে ষড়যন্ত শুরু করেলে সেখান
থেকে পুনরায় তিনি কায়রো গমন করেন। এসময় মিশরীয় সরকার তাকে ১২০ মিশরীয় পাউন্ড
বার্ষিক ভাতা প্রদা করেন। তিনি সংসদীয়
গনতন্ত্রের উপর জোর প্রদান করেন। তার কার্যক্রমে বৃটিশ সরকার চিন্তিত হয়ে পড়লে
মিশর থেকে তাকে বিতারিত করা হয়।
১৮৭৯ সালে তিনি পুনরায় ভারত
চলে আসেন। তিনি চলে আসার পর মিশরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে , বৃটিশ সরকার মনে করে এ
আন্দোলনে তার হাত রয়েছে ,প্রকৃত পক্ষে তার দ্বারা আন্দোলন কারীরা উৎসাহিত হয়েছিল।
জামাল উদ্দিন আফগানি মুসলিম
দেশসমূহে বৃটিশ নীতির উপর আন্দোলন করেন। তাদের
বিরুদ্বে পত্রিকায় কলম লিখেন।
তিনি তার জীবনে মিসরে মুফতি আবদুহুর
মতো একজন নেতা পান। মুফতি আবদুহু’ই তার চিন্তাধারাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার চিন্তা
করেন। কাজেই তিনি প্রথম মিসরকেন্দ্রিক সাংবাদিকতা শুরু করেন মুফতি আবদুহু’র সহায়তায়।
এরপর তিনি ফ্রান্সে গিয়ে ‘আল উরওয়াতুল-উছকা’ বা শক্ত রজ্জু নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ
করেন।
রাজনৈতিক এবং ধর্মীয়
দৃষ্টিভঙ্গিঃ
তিনি রাজনীতি ও ধর্মকে আলাদা
করেননি । তিনি ছিলেন প্যান ইসলামিজমের প্রথম প্রবক্তা।আর এটা ছিল মুসলিম ঐক্য
কেন্দ্রীক একটি রাজনৈতিক আন্দোলন।সারা পৃথিবীতে মুসলমানরা একটি খেলাফতের অধীনে
থাকবে।যারা একসাথে নিজেদের কে অমুসলিম দের আক্রমন থেকে রক্ষা করবে।একথা সত্য যে
তিনি ইসলামী আন্দোলনের চেয়ে রাজনৈতিক দিককে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।তিনি
নাস্তিক্যবাদ কে শুধু ইসলাম না বরং সকল্ ধর্মের জন্য ক্ষতিকার বলে মনে করেছেন।তিনি
ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের বিরুদ্বে কলম ধরেছেন।
ডারউনের মতবাদ খন্ডনঃ
“ঊনিশ শতকের একজন ইংরেজ জীববিজ্ঞানী।
তিনিই প্রথম প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিবর্তনবাদের ধারণা দেন। তিনিই সর্বপ্রথম
অনুধাবন করেন যে সকল প্রকার প্রজাতিই কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ হতে উদ্ভূত হয়েছেএবং
তার এ পর্যবেক্ষণটি সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন।বিবর্তনের এই নানান শাখা-প্রশাখায়
ভাগ হবার বিন্যাসকে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন হিসাবে অভিহিত করেন। তার জীবদ্দশাতেই বিবর্তনবাদ
একটি তত্ত্ব হিসাবে বিজ্ঞানী সমাজ ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের কাছে স্বীকৃতি লাভ করে, তবে ১৯৩০ থেকে ১৯৫০ এর মধ্যে
বিকশিত আধুনিক বিবর্তনিক সংশ্লেষের মাধ্যমে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক নির্বাচনের
গুরুত্ব পূর্ণরূপে অনুধাবন করা সম্ভব হয়। পরিবর্তিত রূপে ডারউইনের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার
ছিল জীববিজ্ঞানের একত্রীকরণ তত্ত্ব,
যা জীববৈচিত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করেন”।
তিনি এই বিভ্রান্তি ও মিথ্যা মতবাদ খন্ডন করেন।এসম্পর্কে কলম
লিখেন।তার জ্ঞান ও রচনা দ্বারা জ্বরবাদ ও নাস্তিক্যবাদের মুখোশ উম্মেচন করেন।
সাহিত্যকর্মঃ
১।তিনি আফগানিস্থানের
ইতিহাসের উপর “আতিমমাতুলবাপন” নামে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস গ্রন্থ লিখেন।
২।রাদ্দে দাহেরিয়ান নামে
একটি গ্রন্থ লিখেন যার দ্বারা ডারউইনের মতবাদ খন্ডন করা হয়।এটি প্রথমে ফার্সী
ভাষায় রচিত হয় । পরবপর্তীতে আরবি সংস্করণ বের হয় আর রাদদু আলা দাহরিয়ান নামে।
মৃত্যুঃ
সাইয়িদ জামাল উদ্দিন আফগানি সাইয়িদ
জামাল উদ্দিন আসাদাবাদি বলেও পরিচিত ছিলেন ।তাকে এখনও উনিশ শতকের একজন ইসলামি আদর্শবাদী, ইসলামি আধুনিকতাবাদের অন্যতম
জনক ও প্যান ইসলামিক ঐক্যের একজন প্রবক্তা মনে করা হয়।এমনকি এও বলা হয় যে, গত দুইশ’ বছরে সারা মুসলিম বিশ্বে
যে কয়জন মহান মুসলিম মনীষী জন্ম নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জামাল উদ্দিন আফগানি অন্যতম
। ধর্মতত্ত্বের চেয়ে পাশ্চাত্য চাপের বিপরীতে মুসলিমদের রাজনৈতিক ঐক্যের দিকেই তিনি
গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি ।তবে তার রাজনৈতিক জীবন ও কর্ম সম্পর্কে না জানলে তার ব্যক্তিত্বের
বিশালতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব নয়। আফগানি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩৮/১৮৩৯ সালে এবং
৯ মার্চ ১৮৯৭ সালে ৫৮-৫৯ বছর বয়সে বর্তমান তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তিনি মারা যান ।
Comments
Post a Comment